আজম খান, বাঘারপাড়া (যশোর): যশোরের বাঘারপাড়ায় সারের ডিলারদের নিকট কৃষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। চড়া দমে সার বিক্রি হলেও অজ্ঞাত কারনে কৃষি বিভাগ মুখে কুলুপ এঁটে আছে।

সেপ্টেম্বর আমন ধানের চাষ এখনো ভালোভাবে শুরু হয়নি। কিন্তুু যশোরের বাঘারপাড়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে রাসায়নিক সার বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে বিএডিসি ও বিসিআইসির ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাষীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন।

বেশি দামেই সার ক্রয় করতে হচ্ছে চাষীদের। অনেকেই উৎপাদন নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন। এমনকি ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে চাষীদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও বেশি দামে বিক্রির কারণে তা করছেন না ডিলাররা। এতে বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়ে প্রমাণসহ কারও কাছে অভিযোগও দিতে পারছেন না চাষীরা।

কৃষি বিভাগের দাবি, সারের কোনো সংকট নেই। অতিরিক্ত দামে কোথাও সার বিক্রি হচ্ছে না। তদারকিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারের সরকার নির্ধারিত আগের দাম ৮০০ টাকা। যার প্রতি কেজির দাম ১৬ টাকা। ট্রিপল সুপার ফসফেট প্রতি বস্তা ১১০০ টাকা (প্রতি কেজি ২২ টাকা) ও মিউরেট অব পটাশ (প্রতি কেজি ১৫ টাকা) ৭৫০ টাকা।

উপজেলায় বিসিআইসি (বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা) ডিলার রয়েছেন ১৪ জন, তারা ইউরিয়া সার বিক্রি করবে আর বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) ডিলার আছেন ২৮ জন তারা শুধু মাত্র নন-ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) বিক্রি করবেন। তবে বিএডিসি ডিলারের মধ্যে বিসিআইসি ডিলারও কয়েকজন রয়েছেন, তারা সব সারই বিক্রি করছেন।

এছাড়া সরকার নিধার্রিত খুচরা ব্যবসায়ী ৮১ জন রয়েছেন। তবে এর মধ্যে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। কৃষি বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ নিশ্চিত করবে বিসিআইসি ও বিএডিসি। গত মাসে ইউরিয়া সার (জুলাই) বরাদ্দ ছিল ৫৮৬ মেট্রিক টন। যার মজুদ আছে ১০০ মেট্রিক টন। চলতি মাস (আগষ্ট) বরাদ্দ রয়েছে ৮৫৮ মেট্রিক টন।

পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছে, ৬ বিঘা জমিতে আমন চাষ করছি। কিছু জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ বস্তা সার কিনেছি। তিনি বলেন, ‘আমি উপজেলা সদরে বিসিআইসি সাব ডিলার হারুন অর রশিদ বাবলুর কাছ থেকে দুই বস্তা ইউরিয়া ১ হাজার টাকা, দুই বস্তা ফসফেট ১৫০০ টাকা ও এক বস্তা পটাশ ১৩০০ টাকায় কিনে জমিতে প্রয়োগ করেছি। এইরকম দাম থাকলে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে।

একই গ্রামের কৃষক বিনয় বিশ্বাস জানান, ১৩ বিঘা জমিতে তিনি আমন চাষ করবেন। সপ্তাহ খানেক আগে ৬ বস্তা সার কিনেছেন। ৯০০ টাকা ইউরিয়া, ১৪৫০ টাকা ফসফেট ও ১২০০ টাকা করে পটাশের বস্তা প্রতি কিনেছেন। কড়াইতলা রোডের হাবিবুরের দোকান থেকে।
খুচরা ব্যবসায়ী মিজান ট্রেডার্সের মালিক হাবিবুর রহমান জানান, ‘দোকানে সার নেই, বেশি দামে সার বিক্রি করা হচ্ছে না।’

মালঞ্চি গ্রামের কৃষক মাজেদ বিশ্বাস বলেন, ৪ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। আরো ৪ বিঘা জমিতে লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। বাঘারপাড়া বাজারে বাবলুর দোকান থেকে ৯৩০ টাকা ইউরিয়া, ১৩৭০টাকা ফসফেট সার কিনেছি।

উপজেলা সদরে বিসিআইসি সাব ডিলার আশিক ট্রেডার্সের মালিক হারুন অর রশিদ বাবলু অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান সার সংকট রয়েছে। দোকানে সার নেই। ডিলাররা ঠিকমতো সার দিচ্ছেন না। অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির প্রশ্নই আসেনা। কৃষকরা ক্যাশ মেমো না চাওয়ায় তাদের দেওয়া হয়না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাবুল্যা এলাকার কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, হাবুল্যা বাজারের মোল্লা ট্রেডার্সে দোকানে অনেক সার মজুদ রয়েছে। সকালে কিছু সময় ও সন্ধ্যার দিকে কিছু সময় দোকান খোলা রাখছেন দোকান মালিক। চাষীরা সার কিনতে গেলে অতিরিক্ত দাম চাওয়া হচ্ছে।
মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক মাজেদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এই মুহুর্তে ইউরিয়া সার নেই। সব জায়গায় যে দামে বিক্রি হচ্ছে আমিও সেই দামে বিক্রি করছি। ক্যাশ মেমোই নেই, তা চাষীদের দেব কোথা থেকে।’

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, সারের কোনো সংকট নাই। ঘাটতিও নাই। কোনো ডিলার বা ব্যবসায়ী কৃষকের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। কোনো চাষী এ বিষয়ে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, সার বিক্রি করার সময় ডিলার ও খুচরা সার ব্যবসায়ীদের কৃষককে ক্যাশ মেমো ও মুঠোফোন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি খেঁাজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।